Friday, February 15, 2019

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় শহিদ ৪০ জওয়ান, বছরের সবচেয়ে বড় হামলা

শ্রীনগর: 
জম্মু ও কাশ্মিরের পুলওয়ামায় (Pulwama IED Blast) জঙ্গি হামলায় যে সমস্ত সি আর পি এফ জওয়ানরা প্রাণ হারিয়েছেন, কিছুক্ষণের মধ্যে সেই তালিকা প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিআরপিএফ। আসলে কিছু জওয়ানদের শরীর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণেই এই নামি র তালিকা প্রকাশ করতে সময় লাগছে।  সূত্র মারফত প্রাপ্ত খবর অনুসারে ৪১ জন জওয়ান শহীদ হয়েছেন। যদিও আধিকারিক স্তরে ৩৭ জন জওয়ান শহীদ হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান এই ঘটনার দায় অস্বীকার করেছে, তাদের মতে, ''ভারতীয় মিডিয়া এবং সরকার কোনো রকম তদন্ত না করেই পাকিস্তানের সাথে এই হামলার নাম জুড়ে দিচ্ছে।'' কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সংঘটিত জঙ্গি হামলা সম্পর্কে পাকিস্তান সরকার বলেছে, ''এটা গুরুতর চিন্তার বিষয়।'' পৃথিবীতে সংঘটিত যেকোনো হিংসাত্মক ঘটনার ক্ষেত্রেই পাকিস্তান চিরকাল নিন্দা করে এসেছে।  আরও জানিয়েছে যে, ''কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই ভারতীয় সরকার ও মিডিয়া এই ঘটনার সাথে পাকিস্তানের নাম জুড়ে দিয়েছে, কিন্তু  এর জন্য পাকিস্তান কোনো ভাবেই দায়ী নয়।'' 
 এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দিল্লিতে সংঘটিত হতে চলেছে গোপন বৈঠক।  বৈঠক শেষ হওয়ার পরে, প্রায় ১২ টা নাগাদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিআরপিএফ-এর ডিজি শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন বলে জানা যাচ্ছে। কালকের হামলায় শহীদ জওয়ানদের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হবে। তারপর একটা বিশেষ বিমানের দ্বারা সমস্ত শবদেহ গাজিয়াবাদ স্থিত হিন্ডেন এয়ার বসে নিয়ে আসা হবে। সেখান থেকেই তাদের শবদেহ পাঠানো হবে তাদের বাড়িতে।যতজন জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন তাদের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। পাঞ্জাবের ৪ থেকে ৫ জন। অন্যান্য রাজ্যের এক-দু জন করে আছেন। 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার জম্মু কাশ্মীর জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল ৭০ সিআরপিএফ জওয়ানদের কনভয়।বিস্ফোরণে একটি বাস পুড়ে যায়। এলকাটি জঙ্গিদের মুক্তাঞ্চল এবং এই এলাকায় রয়েছে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বলয়।
ছবিতে দেখা গেছে, অন্তত একটি গাড়ি রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে, তার পাশেই রয়েছে নীল রং এর কনভয়, সেখান থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। আধিকারিকদের সূত্রে জানা গেছে, হামলা করেছে আদিল আহমেদ দার ওরফে “ওয়াকাস কম্যান্ডো”। স্থানীয় কোকাপুরায় তার বাড়ি বলে জানা গেছে।গত বছরের জঙ্গিগোষ্ঠীতে নাম লেখায় সে।
বিদেশমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ভিকে সিং বলেন, ““একজন সৈনিক এবং ভারতীয় হিসাবে, এই ধরণের কাপুরুষোচিত হামলায় আমার রক্ত গরম হয়ে যায়। দেশের ১৮ জন বীর সৈনিক তাঁদের জীবন উৎসর্গ করলেন। আমি তাঁদের আত্মবলিদানকে স্যালুট জানাই, এবং প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমাদের সৈনিকদের প্রতিটি রক্তবিন্দুর শোধ নেওয়া হবে”।
26aaftfg
স্যোশাল সাইটে হামলার নিন্দা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও।
এই হামলাকে সম্ভাব্য আত্মঘাতী হামলা বলে আখ্যা দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, কনভয়ে ছিলেন মোট ২৫০০ জওয়ান। তিনি বলেন, “উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন, তদন্ত চলছে। আহতদের শুশ্রসা চলছে”।
সংবাদসংস্থা এএনআই অনুসারে, খারাপ আবহাওয়ার জন্য জম্নু কাশ্মীর জাতীয় সড়ক গত দুদিন বন্ধ ছিল।বিকেল সাড়ে তিনটেয় রওনা হয় জওয়ানদের কনভয়।
8rckbjf
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন, সিআরপিএফ জওয়ানদের ওপর এভাবে কাপুরুষোচিত হামলায় তিনি অত্যন্ত বিরক্ত। পুলওয়ামায় হামলা নিয়ে তিনি ট্যুইটে লেখেন, “শহিদদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি”।
জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওপর আব্দুল্লা এই হামলাকে ২০০৪-০৫-এর আগে জঙ্গি হামলার কালো দিনের স্মৃতি উস্কে দেওয়ার মতো বলে বর্ণনা করেছে। ট্যুইট করে ঘটনার নিন্দা করে পিডিপি নেত্রী মেহবুবা নেত্রী লেখেন, “অবন্তীপুরায় খুবই মন খারাপ করা খবর। আমাদের ১২ জন জওয়ান শহিদ, আহত আরও বহু।এই ধরণের জঙ্গি হামলার নিন্দা করার কোনও ভাষা নেই। এই পাগলপন্থা বন্ধ হতে আর কত প্রাণ যাবে”?
ঘটনার কিছুক্ষণ পরে হামলার নিন্দা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।ট্যুইটে হামলার নিন্দা করে তিনি লেখেন, ““পুলওয়ামায় সিআরপিএফ জওয়ানদের ওপর হামলার ঘটনা নিন্দনীয়। আমি এই ধরণের কারপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা করছি। আমাদের বীর নিরাপত্তাকর্মীদের বলিদান বিফলে যাবে না।বীর শহিদদের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে গোটা দেশ। আহতরা দ্রুত আরোগ্যলাভ করুন”।
ঘটাকে হাতিয়ার করে কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলকে আক্রমণের সুযোগ হাতছাড়া করেন নি বিজেপি নেতা জীতেন্দ্র সিং।তিনি প্রশ্ন তোলেন, “সিআরপিএফ জওয়ানদের ওপর এই কাপুরষোচিত হামলা জঙ্গিদের একটি বেপরোয়া পদক্ষেপ। যেখানে পুরো দেশ ভারতের নিরাপত্তা রক্ষীদের পাশে দাঁড়িয়েছে, এটা কি কাশ্মীরের রাজনীতিবিদদের চোখ খুলে দেবে, যারা এই ধরণের ঘটনায় তর্কাতর্কি করেন”।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলার ঘটনার নিন্দা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত, কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা।
হামলার তদন্তে নেমেছে জম্মু কাশ্মীর পুলিশ। শুক্রবার শ্রীনগর যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।
এই হামলা ২০১৬ সালে উরির হামলার থেকেও বেশী, সেবার ভারতীয় বাহিনীর হেডকোয়াটারে হামলা চালায়, শহিদ হন ১৯ জন। পরে সীমান্ত পেরিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে জবাব দেয় ভারতীয় সেনা বাহিনী।
গত দু দশকে সবচেয়ে বড় হামলা হয় ২০০১ এর ১ অক্টোবর।একটি টাটা সুমো গাড়িতে বিস্ফোরক বোঝাই করে জম্মু কাশ্মীর বিধানসভা ভবনের মেন গেটে বিস্ফোরণ ঘটায়।সেবার মৃত্যু হয়েছিল ৩৮ জনের।